.
যৌন হয়রানির শিকার বিচার-সংশ্লিষ্ট নারীরাও প্রতিকার পান না’
দেশের কোনো আদালতেই হাইকোর্টের গাইডলাইন অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটি গঠন করা হয়নি। ফলে নারী বিচারক, আইনজীবী ও বিচার-সংশ্লিষ্ট অন্য নারীরা নিজে যখন যৌন হয়রানির শিকার হন, তখন তাঁর প্রতিকার পান না। যথাযথ কর্তৃপক্ষ না থাকায় যৌন হয়রানির শিকার বেশির ভাগ নারী বিষয়টি চেপে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং এ গবেষণার মুখ্য গবেষক তাসলিমা ইয়াসমিন বলেন, নারীদের পরিবারের সমর্থনের অভাব, পারিবারিক দায়িত্ব পালনের চাপ, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে বিচার-সংশ্লিষ্ট নারীরা উচ্চপর্যায়ে যাওয়ার আগেই ঝরে পড়ছেন। আর আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেও অনেক নারী অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। মঙ্গলবার ‘বিচারব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণ: প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে এক গবেষণার ফলাফল এবং আলোচকদের বক্তব্য থেকে এ চিত্র উঠে এসেছে। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) আয়োজিত এ সম্মেলনে প্রতিটি আইনজীবী সমিতিতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটি গঠনের দাবি তোলা হয়েছে। ব্লাস্টের ‘পাওয়ার’ প্রকল্পের আওতায় গত বছরের ৩১ এপ্রিল থেকে মঙ্গলবার ২৯ মে পর্যন্ত ঢাকা, খুলনা ও কুষ্টিয়ায় একটি গবেষণা করা হয়েছে। ব্লাস্টের সমতাভিত্তিক ফেলোশিপের আওতায় গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করেন আইনপড়ুয়া তিনজন শিক্ষার্থী। প্রতি জেলায় ৪০ জন করে বিচারক, আইনজীবী, আদালতে কর্মরত নারী স্টাফ, আইনজীবী সমিতির সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ গবেষণা করা হয়েছে। আজকের জাতীয় সম্মেলনে এ গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ঢাকার সানজিদা ইসলাম, কুষ্টিয়ার বনানী আফরিন এবং খুলনার সানজিদা তাজরী লিমা তিন জেলার চিত্র তুলে ধরেন। তিন জেলার ফলাফলে যে বিষয়গুলোতে মিল ছিল তা হলো যৌন হয়রানির প্রতিকার না পাওয়ার পরই আছে অবকাঠামোগত সমস্যা। নারী বিচারপতি, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট নারীদের জন্য পৃথক ওয়াশ রুম নেই। নেই সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য ব্রেস্টফিডিং কর্নার। সন্তান রাখার জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র এবং নারীদের বসার জন্য কমন রুমও নেই। নারীবান্ধব কর্মপরিবেশের অভাব প্রকট। নারী বিচারক বা আইনজীবীরা পুরুষদের তুলনায় কম দক্ষ, এটা যেমন বিচার চাইতে আসা মানুষদের ধারণা, একইভাবে আইনসংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠ পুরুষদের অনেকেরও প্রায় একই ধারণা। বিচার-সংশ্লিষ্ট নারীদের পদোন্নতি ভালো চোখে দেখেন না পুরুষ সহকর্মীরা। মুক্ত আলোচনায় শ্রম আদালতের একজন নারী আইনজীবী বলেন, এক জেলা জজ খাসকামরায় দেখা করতে বলেন। একবার দেখা করার পর বিষয়টি ভালো না লাগায় তিনি আর তাঁর ডাকে সাড়া দেননি। ফলে এই নারীর আপিল শুনানির চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা একটি মামলা ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন ওই জেলা জজ। কিন্তু বিষয়টি কাউকে তিনি বলতে পারেননি। জাতীয় সম্মেলনের প্রধান অতিথি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাইমা হায়দার যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটি গঠনের দাবি জানান। বক্তব্যে তিনি ফিরে যান ৩০ বছর আগের ঘটনায়। তিনি জানান, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে তিনি একমাত্র নারী শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষার্থীদের সবাই ছিল ছেলে। পরিবার থেকে বাধা এসেছে এ কাজে। তবে তিনি দমে যাননি। তিনিই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের ভর্তির নিয়ম চালু করেন। বিচারপতি নাইমা হায়দার জানালেন, তাঁদেরও টয়লেটের চাবি কবজা করতে দৌড়াতে হয়েছে। তিনি নারী হিসেবে প্রথম সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মতে, নিজেকে নারী বা পুরুষ না ভেবে মানুষ ভাবতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিজেকে প্রমাণ করেই সামনে অগ্রসর হতে হবে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এইড অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস কমিটির চেয়ারম্যান ও নির্বাচিত সদস্য জেড আই খান পান্না আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি আইনজীবী সমিতিতে যাতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটি গঠন করা হয়, তার উদ্যোগ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সম্মেলনে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ব্লাস্টের পরিচালক ও আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) গোলাম কিবরিয়া, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম, মানবাধিকার আইনজীবী ফস্টিনা পেরেরা, ব্লাস্টের সমন্বয়কারী সারাবান তাহুরা জামান প্রমুখ।
SHAMIN REZA

I'm Jillur Rahman. A full time web designer. I enjoy to make modern template. I love create blogger template and write about web design, blogger. Now I'm working with Themeforest. You can buy our templates from Themeforest.

No Comment to " যৌন হয়রানির শিকার বিচার-সংশ্লিষ্ট নারীরাও প্রতিকার পান না’ "